Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশীয় ফলের জাত উন্নয়ন ও গবেষণা (আষাঢ় ১৪২৫)

বাংলাদেশে হরেক রকম ফলের আবাদ করা হচ্ছে এখন। এর মধ্যে যেমন দেশীয় ফল রয়েছে তেমনি আবার বিদেশী ফলও রয়েছে। দেশীয় ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল হলো আম, কাঁঠাল, আনারস, কলা, কুল, পেয়ারা, বেল, জলপাই, তাল, লুকলুকি, আমলকী, জাম আর নানা রকম লেবু। আমাদের দেশে উৎপাদিত ফলের বেশিরভাগ আসে কয়টি ফল থেকে। এদের মধ্যে কলা আর পেয়ারা ছাড়া কোনো ফলই সারা বছর পাওয়া যায় না। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে এসব ফলের প্রাপ্তি। বিশেষ করে বৈশাখ থেকে বড় জোর শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমাদের এসব ফলের উৎপাদন হয়ে থাকে। যে কারণে প্রায় সারা বছরই বিদেশ থেকে প্রচুর ফল আমাদের আমদানি করতে হয়। এসব ফল আবার চড়া দামে কিনতে হয়। আমাদের দেশীয় ফলের নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে পারলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে অন্যদিকে কেবল মৌসুমে নয় অমৌসুমেও এর কোনো কোনোটা আবাদ উপযোগী হতে পারে।


সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের ফল গবেষণা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বেশ কিছু ফলের জাত অবশ্য গত দশ বছরে অবমুক্ত করা হয়েছে যার বেশির ভাগই দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা উত্তম জাত। ফলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে সঙ্করায়ন করা কিংবা ফলে মিউটেশন ঘটিয়ে নতুন জাত উদ্ভাবন করার ঘটনা এ দেশে বেশ বিরল। কেবলমাত্র আমের দু’চারটি জাত উদ্ভাবন ছাড়া অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রে আমাদের জাত উন্নয়ন গবেষণা বড় দুর্বল।


ফল গবেষণার কিছু বাড়তি অসুবিধা রয়েছে। এক, ফল গাছ আধিকাংশ ক্ষেত্রে দীর্ঘ দেহী হওয়ায় এদের মধ্যে সঙ্করায়ন করার কাজটি খানিকটা কঠিন। দুই, অধিকাংশ ফল গাছে ফল ধরতে সময় লাগে বলে ফলের জাত উদ্ভাবন করার জন্য সঙ্করায়ন পদ্ধতির দিকে গবেষকগণ কম আগ্রহী হন। আমাদের দেশে ফলের জাত উন্নয়ন গবেষণার আরো কিছু বাড়তি অসুবিধা রয়েছে। এক, ফল গবেষণার সাথে জড়িত গবেষকদের উদ্ভিদ প্রজনন ও আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। দুই, যাদের এ বিষয়ক জ্ঞান বেশি রয়েছে পেশাগত প্রতিযোগিতার নেতিবাচক মনোভাবের কারণে তাদের এ বিষয়ক গবেষণা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ হলে এবং গোষ্ঠীগত পেশার চেয়ে জাতীয় উন্নয়নকে গুরুত্ব দিলে শেষোক্ত সমস্যা ঘটিয়ে ওঠা সম্ভব। আর তা পারলে ফল গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের দ্বারও উন্মোচিত হতে পারে। আম আমাদের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফল ফসল। স্বাদে, গন্ধে, বর্ণে আমের বৈচিত্র্যও আমাদের কম নয়। তাছাড়া আমের নানান আকৃতি ও পাকার সময় কালেও বেশ বৈচিত্র্য রয়েছে। এসব বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন আম জাতে বিদ্যমান উত্তম বৈশিষ্ট্য দেওয়া নেওয়া করার জন্য আমে সঙ্করায়ন করার পদ্ধতি ইতোমধ্যে আমাদের দেশে চালু হয়েছে। আম অঙ্গজ জনমক্ষম একটি ফসল বলে সঠিক দু’টি পেরেন্ট জাতের মধ্যে সঙ্করায়ন করে পাওয়া হাইব্রিড গাছের মধ্য থেকে উত্তম হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন খুব কঠিন কাজ নয়। আর একটি- দু’টি উত্তম হাইব্রিড জাত পেলে অঙ্গজ বংশ বিস্তার করে এর গুণাগুণ ধরে রাখা সম্ভব দিনের পর দিন।


হাইব্রিড আম যে উত্তম হতে পারে তার  প্রমাণ আম্রপালি, আম জাতটি। এটি ভারতে উদ্ভাবিত একটি হাইব্রিড আম। এই আম জাতটির আমাদের দেশেও বিস্তার ঘটানো হয়েছে। হাইব্রিড হলেও একেও পেরেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের একাধিক জাতের সাথে সঙ্করায়ন করে নেয়া যেতে পারে। অতপর তা থেকে সৃষ্ট ভিন্ন রকম আম গাছের মধ্য থেকে উত্তম গাছকে অঙ্গজ বংশ বিস্তার করে রক্ষা করা সম্ভব। আর এর মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে  উত্তম আম জাত। এভাবে পাওয়া সম্ভব নানা আকার আকৃতি, বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদের আম। কাঁঠাল নিয়ে আমাদের বহুমাত্রিক গবেষণার সুযোগ রয়েছে। কাঁঠালের বিভিন্ন জাতের মধ্যে গুণগত মানের দিক থেকে নানা রকম বৈচিত্র্য রয়েছে।  কাঁঠালের আকার আকৃতি, এর বর্ণ এবং দেহের কাঁটার আকার আকৃতি এদের তীক্ষèতায় বেশ পার্থক্য রয়েছে। কোয়ার আকার আকৃতি, এর পেলবতা, স্বাদ, গন্ধ, মিষ্টতার দিক থেকেও কাঁঠালে বিশাল বৈচিত্র্য রয়েছে।
এসব ছাড়া পরিপক্বতার দিক থেকে আগাম, মাঝারি ও নাবি বৈশিষ্ট্যের জন্যও এদের মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে। ফলে এই বিশাল বৈচিত্র্য থেকে মানুষের চাহিদামাফিক গুণগত মানসম্পন্ন কয়েক রকমের কাঁঠালের জাত বাছাই করে এর চাষ বৃদ্ধি করার দিকে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ ও প্রয়োজন দুটোই রয়েছে। এর জন্য উত্তম জাত বাছাই এবং এর বংশ বিস্তারের জন্য চারা উৎপাদন করার বিষয়ে আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কাঁঠালের টিস্যু কালচার করে চারা উৎপাদনকে আরো সহজতর করতে হবে। কাঁঠাল পর পরাগী ফসল। আশপাশের গাছের পরাগ রেণু উড়ে এসে ফুলের গর্ভমু-ে পতিত হয় বলে এর বীজ থেকে উৎপাদিত কাঁঠাল গাছের কাঁঠালের গুণাগুণ অক্ষত রাখা সম্ভব হয় না। সে কারণে টিস্যু কালচার থেকে কাঁঠালের চারা উৎপাদন সম্ভব হলেও এর উৎপাদন কৌশলকে আরো সহজতর করার গবেষণা চালিয়ে যায়ার প্রয়োজন রয়েছে।
পেয়ারারও বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় জাত রয়েছে আমাদের। পেয়ারার আকার আকৃতি এর বহিরাবরণ, এর ভেতরকার বীজের পরিমাণ, এর পেলবতা, স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আমাদের বাজারে দু-তিন রকম জাতের পেয়ারার আধিক্য রয়েছে। তবে দিন দিন বর্ণিল মাংসল পেয়ারা কেবল হ্রাস পাচ্ছে বললে ভুল হবে বরং বিলুপ্তির মুখে পড়েছে বললে সঠিক হবে। বর্ণিল পেয়ারা এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এদের যবনিক বাড়তি আয়রনও রয়েছে। ফলে এসব পেয়ারার জাত সংগ্রহ করে ফিল্ড জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া এখন আমরা পুষ্টির বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি বলে বর্ণিল মাংসল পেয়ারার উৎপাদন কৌশল এবং এদের ব্যাপক বংশ বিস্তার  ঘটানোর কাজটি করা খুব প্রয়োজন। তাছাড়া বর্ণিল পেয়ারার সাথে আমাদের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা সাধারণ পেয়ারার সঙ্করায়ন করা যেতে পারে। এতে ভিন্ন বর্ণেরও মানের পেয়ারার জাত উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।


কলা ফসলের জাত উদ্ভাবনে আমাদের গবেষণা হয়েছে সবচেয়ে কম। এর জেনোমিক গবেষণা হয়নি বললেই চলে। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে নানা রকম পরিপ্লয়েড কলার জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে আন্তঃজাত সঙ্কয়ায়নের মাধ্যমে। এর ফলে কেবল যে নানা আকৃতির ও গুণমান বিশিষ্ট ফল উৎপাদিত হচ্ছে তাই নয় বরং রোগসহিষ্ণু জাতও পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। আমাদের পাহাড়ের কোনো কোনো কলা প্রজাতি ভষণ রকম রোগ ও কীটপতঙ্গ সহনশীল। এর অন্য বৈশিষ্ট্য উত্তম না হলেও এসব বৈশিষ্ট্য আমাদের আবাদি কলা জাতে স্থানান্তর করা যেতে পারে। সারা বছর ভিন্নতর স্বাদ বিশিষ্ট কলার জাত পেতে হলে কলার প্রজনন বিষয়ক গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। এক বছর দু’বছরেই ফল ধরে বলে কলা প্রজনন করাই যেতে পারে।


লেবুর ভালো বৈচিত্র্য রয়েছে আমাদের। নরসিংদী এলাকায় কলম্বো লেবু তো বিদেশেও রপ্তানি হয়। উত্তম চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে এর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। লেবুতে আমাদের পাহাড়ে দু-একটি বীজহীন লেবুর সন্ধান পাওয়া গেছে। দু’ভাবে এই লেবুকে কাজে লাগানো যায়। এক, অঙ্গজ বংশবিস্তারক্ষম এই লেবু জাতের অঙ্গজ উপায়ে চারা উৎপাদনকে উৎসাহিত করে বীজহীন লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় যেমন পাহাড়ে তেমনি সমতল ভূমিতেও। দুই, বীজহীন লেবুর এই বৈশিষ্ট্যটি আমাদের অন্য লেবুতে স্থানান্তর করায় গবেষণা চালানো যায় অবশ্যই। এর জন্য অবশ্যই প্রজননবিদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে ফল গবেষণা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির মাধ্যমে। প্রকৃত প্রজনন বিদদেরকে কাজ করার পরিবেশ দিতে পারলে বাংলাদেশেও তৈরি হতে পারে বৈচিত্র্যময় সব লেবুর জাত। তাছাড়া লেবুর কিছু রোগ বালাই বা কীট পতঙ্গ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনের জন্যও গবেষণা চলতে পারে।


বেল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। গুণেমানে এর তুলনা হয় না। বেল ফসলের জাতের মধ্যেও আমাদের বেল যানিক জীববৈচিত্র্য এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। গাজীপুরের বেল তো এ দেশের এক বিখ্যাত সম্পদ। বিশালকৃতি, কম বীজ ও চমৎকার স্বাদ গন্ধসমৃদ্ধ এই বেলজাত আমাদের বেল উন্নয়নের পেরেন্ট স্টক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশে অনেক ছোট বেল জাতও রয়েছে যাদের আঁশ কম আবার স্বাদ ও গন্ধও উত্তম। যদিও অধিকাংশ স্থানীয় বেল জাতগুলোর মান সন্তোষজনক নয়। বেলের বংশ বিস্তারের জন্য টিস্যু কালচার প্রণিত প্রটোকল উদ্ভাবন করা গেলে দেশে এ বেলের ব্যাপক প্রসার ঘটানো সম্ভব। এর টিস্যু কালচার কঠিন হবে তবে গবেষণা চালিয়ে গেলে তা অসম্ভব হওয়ার কোনো কারণ নেই।


আমাদের পানি ফলেরও যানিক বৈচিত্র্য রয়েছে। ফলের আকারে এরা ছোট, বড় ও মাঝারি তিন রকম রয়েছে। রয়েছে এদের ফলে বীজ ঘনত্বের তারতম্যও। কোনো কোনো জাতের বীজের গন্ধ এবং স্বাদ বেশ মন কাড়ে। ভীষণ আয়রন সমৃদ্ধ এই ফল। সরাসরি বড় জাতের বংশ বিস্তার করে এবং বড় জাতের বৈশিষ্ট্য অন্য জাতে স্থানান্তর করে পানিফলের চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব। তালের ক্ষেত্রে আমাদের কোন গবেষণাই বাস্তবে হয়নি। তালেরও স্বাদে গন্ধে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাল এক লম্বা সময়ের ফলন। তালগাছ পুরুষ না স্ত্রী হবে এটি জানতেও অপেক্ষা করতে হয় কত বছর। আনবিক কৌশল ব্যবহার করে আগাম তালগাছের লিঙ্গ নির্ধারণ করার গবেষণা চালানো দরকার। তাহলে স্ত্রী লিঙ্গিক চারা লাগিয়ে লাভবান হওয়ার বিস্তর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।


ফল ফসলের জাত উদ্ভাবন গবেষণার পাশাপাশি উদ্ভাবিত জাতসমূহের আবাদ প্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণাও গুরুত্বপূর্ণ। নতুন উদ্ভাবিত জাতের চাষাবাদ পদ্ধতি, এদের রোগ ও পোকামাকড় দমনসহ ফলের সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনাজনিত গবেষণা নতুন জাতের সফলতা অর্জন করার জন্যই আবশ্যক। তাছাড়া ফল ফসলের চারা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবনও এক জরুরি বিষয়। কম দামে অল্প স্থানে উত্তম চারা উৎপাদন ফলের জাত প্রসারের জন্য এক আবশ্যক বিষয়। ফলের উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন ও এদের আধুনিকায়নের গবেষণা দেশে চলছে। অধিকাংশ ফল যেহেতু কোনো রকম প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াই সরাসরি বপন করা হয় বলে রাসায়নিক বালাইনাশকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে ফল চাষকে উৎসাহিত করার জন্যও গবেষণা প্রয়োজন। বিশেষ করে সমন্বিত বালাইনাশক এবং বীজ বালাইনাশক ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য  গবেষণা কর্মকাণ্ডে জোর দেয়া দরকার।

ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া*

*প্রফেসর জেনিটিকস অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগ,  শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলানগর, ঢাকা


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon